সাঁওতাল জনগোষ্ঠী দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এক অন্যতম বৃহৎ আদিবাসী জনগোষ্ঠী। এদের বাসস্থান ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটান দেশে মুলত দেখা যায়। ভারতে সাঁওতাল জনগোষ্ঠী মূলত পশ্চিমবাংলা, বিহার, ঝাড়খণ্ড, উড়িষ্যা, ছত্তিসগড়, আসাম ও ত্রিপুরা রাজ্যে বসবাস করে। পার্শ্ববর্তি দেশ বাংলাদেশে সাঁওতাল জনগোষ্ঠী মূলত রাজশাহী, দিনাজপুর, রংপুর ও বগুড়া জেলায় বসবাস করে।
সাঁওতালরা বিশ্বাস করে যে, আদি মানব ও মানবী তথা পিলচু হাড়াম ও পিলচু বুড়ির সাত জোড়া সন্তান থেকেই তাদের উদ্ভব। এজন্যই সাঁওতালরা সাতটি গোত্রে বিভক্ত। সাঁওতালী ভাষায় এই গোত্র গুলো ‘পারিস’ নামে অভিহিত। তাঁদের গোত্রগুলি হল – ১) হাঁসদা, ২) সরেন, ৩) টুডু, ৪) কিসকু, ৫) মুরমু, ৬) মান্ডি, ৭) বাস্কে, ৮) বেসরা, ৯) হেমরম, ১০) পাউরিয়া, ১১) চঁড়ে, ১২) বেদেয়া।
প্রথমে সাতটি গোত্র ও পরবর্তীকালে তাদের মধ্যে আরও পাঁচটি গোত্রের উদ্ভব ঘটে, মোট বারোটি গোত্র হয়। সাঁওতালদের মধ্যে টোটেম বিশ্বাস প্রচলিত আছে। প্রতিটি গোত্র তাদের পূর্বপুরুষ কিংবা গাছপালা, জীবজন্তু ও পশুপাখী ইত্যাদি নামে পরিচিত। সাঁওতালরা পিতৃপ্রধান পরিবারের লোক। তাদের সমাজে পিতার সূত্র ধরে সন্তানের দল ও গোত্র (বংশ) পরিচয় নির্ণয় করা হয়।
জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সাঁওতাল সমাজের নিজস্ব আচরণ বিধি বা সংস্কার আছে। সাঁওতাল সমাজে আচরণ বিধি পালনে পঞ্চজন তথা ‘আতো মড়ে হড়’ এর বিশেষ ভুমিকা আছে। এই পঞ্চজন তথা ‘আতো মড়ে হড়’ হলেন ১) মাঝি, ২) পারানিক, ৩) নাইকে, ৪) গোডেত, ৫) জগ-মাঝি, ৬) জগ-পারানিক, ৭) কুডোম নাইকে ও ৮) ভদ্দ। এই পঞ্চজন তথা ‘আতো মড়ে হড়’ একটি গ্রামের সাঁওতাল সমাজকে সামলে রাখে, একজন সাঁওতালের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সমস্ত কাজ করে।