পশ্চিমবাংলা রাজ্যের অন্যতম পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী আদিম আদিবাসী লোধা শবর জনগোষ্ঠী। অনুন্নয়ন ও বঞ্চনার চিত্র চোখে আঙুল দিয়ে সভ্য সমাজকে দেখিয়ে বার বার সংবাদ শিরোনামে এসেছে লোধা শবর সমাজ। সে ২০০৪ সালে বেলপাহাড়ির আমলাশোল গ্রামে অনাহারে ৫ লোধা শবরের মৃত্যুর খবর হোক বা ২০১৮ সালে বিষ মদে লোধা শবরদের মৃত্যুর মিছিলের খবর। যদিও সরকারি স্তরে আদিম আদিবাসী জনগোষ্ঠী হওয়ায় লোধা শবরদের উন্নয়নে অনেক প্রকল্প রয়েছে, কিন্তু সেই প্রকল্পগুলি বাস্তবায়নের অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ।
অনুন্নয়ন ও বঞ্চনার চিত্র তুলে ধরে সরকারি প্রকল্পগুলি সঠিক বাস্তবায়নের দাবীতে বার বার সরব হয়েছে লোধা শবর সমাজের একাধিক সংগঠন। পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলা মিলিয়ে প্রায় ১৭ হাজার পরিবারে ৯৬ হাজার লোধা শবর সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করেন।
বরাবরই উপেক্ষিত জঙ্গলমহল ও সংলগ্ন এলাকার লোধা শবর সম্প্রদায়ের লোকজন রাজ্যে রাজনৈতিক ক্ষমতার পরিবর্তনের পর যথাযথ উন্নয়নের আশা করেছিলেন, কিন্তু অচিরেই হতাশ হয়েছেন। নতুন সরকারের পক্ষ থেকে জঙ্গলমহলের সার্বিক ভোল পাল্টানোর চেষ্টা হলেও লোধা শবরদের ক্ষেত্রে খুব একটা পরিবর্তন দেখা যায়নি।
তাই গত ২০১১ সাল থেকে একাধিক লোধা শবর সংগঠনের পক্ষ থেকে বারবার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি দেখা করে নিজেদের দাবি রাখতে সচেষ্ট হয়েছিল, কিন্তু সফল হয়নি। গত শুক্রবার ৩০/০৮/২০১৯ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের খাদ্য বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ অমূল্য মাইতির সহযোগিতায় লোধা শবর কল্যাণ সমিতির নেতৃত্বরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে দেখা করে নিজেদের অভাব অভিযোগের কথা জানান। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে প্রথমে আদিবাসী উন্নয়ন দফতরের প্রশাসনিক সচিব সঞ্জয় কুমার থাডে লোধা শবর সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে তাদের সঙ্গে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। বেশ কিছুক্ষণ বৈঠকের পরেই একগুচ্ছ নতুন পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে। এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী মহাশয়ও।
লোধা শবর জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশগুলি হল –
ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় লোধা উন্নয়ন সেল গঠন করা হবে।
ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ১০০ জন করে লোধা শবর পরিবারের মহিলাদের বিউটিশিয়ান প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
১০০ জনকে লোধা শবর মহিলাকে টেইলারিং প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
লোধা শবর অধ্যুষিত বেশকিছু গ্রামে সোলার সিস্টেমে পানীয় সরবরাহ শুরু হবে। এজন্য বরাদ্দ হবে ৯০ লক্ষ টাকা।
ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা থেকে প্রায় দুই হাজার লোধাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে সরকারি বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিরাপত্তার কাজে লাগানো হবে।
লোধা শবর দের জন্য বিভিন্ন গ্রামে বাড়ি তৈরি করা হবে।
লোধা শবর দের স্বনির্ভর করতে প্রাণী প্রতিপালনেও সমস্ত রকম সহযোগিতা করা হবে আদিবাসী উন্নয়ন দপ্তর থেকে।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ অমূল্য মাইতি বলেন লোধা শবর সংগঠনের নেতাদের কাছ থেকে বিভিন্ন সমস্যাগুলি শুনে মুখ্যমন্ত্রী এই সমস্ত পদক্ষেপগুলি নেবার নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে এদের রেশন কার্ড সম্বলিত সমস্যাগুলো সমাধানের রাস্তা বের করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর সাথে এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন লোধা শবর কল্যাণ সমিতির ঝাড়গ্রাম জেলার নেতা খগেন মাণ্ডি ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার নেতা বলাই নায়েক। এদিন বলাই নায়েক বলেন, আমরা ২০১১ সাল থেকে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি দেখা করে দাবি রাখার চেষ্টায় ছিলাম। আজ সেই সুযোগ হয়েছে। আজকে অনেকগুলি দাবি পূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
ছবি সৌজন্য – পুবের কলম।