সম্প্রতি রাজ্যের মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদাকে তৃণমূল কংগ্রেস দল অনুমোদিত পশ্চিমবঙ্গ এসটি (আদিবাসী) সেলের রাজ্য সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হল। তৃণমূল কংগ্রেসের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী দলের তরফে লিখিতভাবে বিরবাহাকে নতুন পদে নিযুক্তির কথা জানিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বন দফতরের প্রতিমন্ত্রী ও স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও স্বনিযুক্তি দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা। বর্তমানে বিরবাহা পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারপার্সন সহ একাধিক সরকারি কমিটিরও মাথায় রয়েছেন। সম্প্রতি ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারপার্সনের পদও তাঁকে দেওয়া হয়েছে।
রাজনীতিতে যোগ দেবার আগে সাঁওতালি সিনেমা জগতে অভিনয় করে মহানায়িকা খ্যাতি লাভ করেছিলেন বিরবাহা। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন) দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন। ঝাড়গ্রাম বিধানসভায় বিপুল ভোটে জিতেই মন্ত্রী হন। অথচ তার আগে ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন) এর সম্পাদক পদে থাকাকালীন পুরসভা, বিধানসভা ও লোকসভায় দাঁড়িয়ে তিনবার হেরেছিলেন বিরবাহা। তাঁর বাবা প্রয়াত নরেন হাঁসদা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন) দলটি। নরেন বাবু ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের ঝাড়খণ্ডী আন্দোলনের প্রবাদ পুরুষ। বাম আমলে জঙ্গলমহল এলাকায় সিপিএমের নির্বাচনী বিজয়রথ রুখে দিয়ে সিপিএমকে নাস্তানাবুদ করেছিলেন নরেন বাবু। বিনপুর বিধানসভা আসন থেকে দু’বার বিধায়ক নির্বাচিত হন নরেন বাবু। নরেন বাবু প্রয়াত হবার পর ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন) দলের সভাপতি হন বিরবাহা হাঁসদার মা চুনিবালা হাঁসদা। চুনিবালা হাঁসদাও বিনপুর বিধানসভা আসন থেকে দুইবার বিধায়ক হন। কিন্তু ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতার পালাবদলের পরে ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন) দলের অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে যায়। ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন) দলের অধিকাংশ নেতা কর্মীরা তৃণমূল দলে যোগ দিয়েছিলেন।
২০২১ সালে তৃণমূল দলে যোগ দিয়ে বিরবাহা হাঁসদার রাজনৈতিক উত্থান অতি দ্রুত হয়েছে। তৃণমূল সুপ্রিমো মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারে বারে তাঁর আস্থা বিরবাহা হাঁসদার ওপর রেখেছেন। চলতি বছরে মার্চ ও অগস্টে দু’দফায় রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু কলকাতায় সফরে এসেছিলেন। রাজ্যের তরফে দু’বারই রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ‘মিনিস্টার ইন ওয়েটিং’ ছিলেন বিরবাহা।
এতদিন তৃণমূল দলের সাংগঠনিক পদে না থাকলেও ঝাড়গ্রাম জেলায় শাসকদলের রাজনীতিতে মন্ত্রী বিরবাহার যথেষ্ট প্রভাব ছিল। এ বার দলের এসটি সেলের রাজ্য সভাপতির পদ দিয়ে দলীয়ভাবেও বিরবাহা হাঁসদার গুরুত্ব বাড়ানো হল বলে মানছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। অন্যদিকে বিরবাহা নিজে বলছেন, ‘‘বিভিন্ন জেলায় গিয়ে এসটি সেলের বৈঠক করব। রাজনীতি সচেতন তরুণ প্রজন্মের আদিবাসী যুবক-যুবতীদের সংগঠনে নিয়ে আসার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’’