লিখেছেন – প্রদীপ কুমার হাঁসদা, কেন্দ্রীয় সভাপতি, ভারত দিশম মাঝি মাডোয়া (Bharat Disom Majhi Madowa)|
ঝাড়খণ্ড বিধানসভা (২০১৯) নির্বাচনে বিজেপিকে হারিয়ে সারা দেশের মিডিয়ার কাছে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছেন ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার কার্যকরি সভাপতি ও মহাজোটের প্রধান হেমন্ত সরেন|
এবার সারা দেশের কাছে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠুক ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও হেমন্ত সরেনের পিতা দিশম গুরু শিবু সরেন|
আলোচনায় উঠে আসুক সুদখোর মহাজন ও জমিদারদের বিরুদ্ধে দিশম গুরু শিবু সরেনের আপসহীন সংগ্রামের কথা| গভীর জঙ্গলে থেকে তৎকালীন রাষ্ট্রযন্ত্র, সুদখোর মহাজন ও জমিদারতন্ত্রের বিরুদ্ধে দিশম গুরু শিবু সরেনের সংগ্রাম| আদিবাসী মানুষদের বেদখল হয়ে যাওয়া জমি উদ্ধারের সংগ্রামের কথা| আদিবাসীদের জন্য পৃথক ঝাড়খণ্ড রাজ্য গঠনের জন্য লাগাতার ৪০ বছর ধরে আপসহীন আন্দোলনের কাহিনী|
ঝাড়খণ্ড আন্দোলনের কাহিনী সারা দেশে তুলে ধরতে তিন কিংবদন্তী ঝাড়খণ্ডী নেতা মারাং গমকে জয়পাল সিং মুণ্ডা, ঝাড়খণ্ড গমকে এন ই হোরো ও দিশম গুরু শিবু সরেনকে ভারতরত্ন প্রদানের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে সুপারিশ করুক হেমন্ত সরেন নেতৃত্বাধীন ঝাড়খণ্ড সরকার| ঝাড়খণ্ড আন্দোলনের কাহিনী ও কিংবদন্তী ঝাড়খণ্ডী নেতাদের জীবনকাহিনী ঝাড়খণ্ড রাজ্যের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসে অন্তর্ভূক্ত করুক হেমন্ত সরেন নেতৃত্বাধীন ঝাড়খণ্ড সরকার|
গরীব মানুষ ও আদিবাসীদের মসীহা ছিলেন দিশম গুরু “গুরুজী” শিবু সরেন| সময়ে সময়ে আদিবাসী সমাজের গর্ভ থেকে অনেক মহাপুরুষের জন্ম হয়েছে| কিন্তু আমাদের দুরভাগ্য তাঁদের সম্বন্ধে আমরা খুবেই কম জানি| তাঁদের অন্যতম ঝাড়খণ্ড রাজ্যের তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী, ঝাড়খণ্ড আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা ও ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা দিশম গুরু “গুরুজী” শিবু সরেন|
আমরা অধিকাংশই দিশম গুরু “গুরুজী” শিবু সরেন কে একজন রাজনীতিক হিসেবেই জানি| কিন্তু কতজন আমরা জানি যে দিশম গুরু “গুরুজী” শিবু সরেন একজন বড় মাপের সমাজ সংস্কারক ছিলেন|
খুব ছোটবেলায় স্কুলে পড়ার সময় স্কুল শিক্ষক পিতাকে মহাজনদের হাতে খুন হতে দেখে বালক শিবু সরেনের মনে প্রতিবাদের স্পৃহা জেগে ওঠে| তৎকালীন সময়ে গরীব গ্রামবাসীদের ওপর সুদখোর মহাজন ও জমিদারদের অত্যাচার চরম ছিল| সুদখোর মহাজন ও জমিদারেরা গরীব গ্রামবাসীদের জমি বেদখল করেছিল ও গ্রামবাসীদের ওপর চরম অত্যাচার করত| শিবু সরেনের পিতা স্থানীয় স্কুল শিক্ষক সোবরন সরেন সুদখোর মহাজন ও জমিদারদের বিরুদ্ধে গ্রামবাসীদের সচেতন ও সংগঠিত করছিলেন| এই আক্রোশে সুদখোর মহাজন ও জমিদারেরা সোবরন সরেনকে খুন করে|
বালক শিবু সরেনের ওপর এই ঘটনা বিশাল প্রভাব বিস্তার করে| খুন হয়ে যাওয়া পিতার অসমাপ্ত কাজ সম্পূর্ণ করতে ও সুদখোর মহাজন ও জমিদারদের হাত থেকে গরীব গ্রামবাসীদের রক্ষা করার শপথ নিলেন| মাধ্যমিক পড়া শেষ করে পড়াশোনা ছেড়ে পাকাপাকি ভাবে সমাজ উদ্ধার কার্যে মনোনিবেশ করলেন|
মাত্র ১৮ বছর বয়সে গড়ে তুলে ছিলেন আদিবাসী সামাজিক সংগঠন “সাঁওতাল নবযুবক সংঘ”| পরবর্তীকালে গঠন করেছিলেন “সনৎ সাঁওতাল সমাজ”| ধানবাদ জেলার তুন্ডি পাহাডের ওপর এক আশ্রম নির্মান করে আদিবাসীদের সচেতন করা ও সুদখোর মহাজন ও জমিদারদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের প্রস্তুতি শুরু করলেন| আদিবাসী সমাজের যাবতীয় কুরীতির বিরুদ্ধে সচেতনতা অভিযান দিশম গুরু “গুরুজী” শিবু সরেনের এক বিরাট সামাজিক আন্দোলন| মদ সহ বিভিন্ন নেশা করা আদিবাসী সমাজের এক বিরাট রোগ| নেশা করে সুদখোর মহাজন ও জমিদারদের কাছে টাকা ধার করত আদিবাসীরা| সুযোগ বুঝে নিরক্ষর আদিবাসীদের সুদের জালে ফাঁসিয়ে আদিবাসীদের জমি বেদখল করত লোভী সুদখোর মহাজন ও জমিদারেরা|
দিশম গুরু “গুরুজী” শিবু সরেন প্রথমেই আদিবাসীদের নেশার জাল থেকে মুক্ত করে সুদখোর মহাজন ও জমিদারদের হাত থেকে আদিবাসীদর জমি বেদখল হওয়া আটকাতে চাইলেন| আদিবাসীদের মধ্যে মদ হাঁড়িয়ার নেশা আটকানো অতি দুরূহ কাজ| কিন্তু এই অসাধ্য কাজ করে দেখিয়েছিলেন দিশম গুরু “গুরুজী” শিবু সরেন| শিবু সরেন ও তাঁর সহযোগীদের লাগাতার সচেতনতা প্রচারের ফলে গরীব গ্রামবাসী ও আদিবাসীদের মধ্য নেশামুক্তি ঘটে ও সুদখোর মহাজন ও জমিদারদের হাত থেকে গরীব গ্রামবাসী ও আদিবাসীদের বেঁচে যাওয়া জমিগুলি রক্ষা পায়|
গরীব গ্রামবাসী ও আদিবাসীদের জমি দখল করতে না পেরে সুদখোর মহাজন ও জমিদারদের রাগ গিয়ে পড়ে দিশম গুরু “গুরুজী” শিবু সরেনের ওপর| দিশম গুরু “গুরুজী” শিবু সরেনকে খুন করতে অনেকবার প্রাণঘাতী হামলা চালানো হয়| দিশম গুরু “গুরুজী” শিবু সরেনের আশ্রমের ওপরও হামলা চালানো হয়|
দিশম গুরু “গুরুজী” শিবু সরেন সুদখোর মহাজন ও জমিদারদের শায়েস্তা করতে “ধান কাটো” আন্দোলনের ডাক দেন| এই “ধান কাটো” আন্দোলন দিশম গুরু “গুরুজী” শিবু সরেনের দ্বিতৃয় বিখ্যাত আন্দোলন| এই আন্দোলনই শিবু সরেনকে দিশম গুরু “গুরুজী” শিবু সরেন রূপে রুপান্তরিত করল| এই “ধান কাটো” আন্দোলনের প্রভাব সাঁওতাল পরগনা ডিভিশনের সমস্ত জেলাগুলিতে ছড়িয়ে পড়ল| সেই সময় সাঁওতাল পরগনা ডিভিশনের সমস্ত জেলাগুলিতেই অধিকাংশ গরীব গ্রামবাসী ও আদিবাসীদের জমি সুদখোর মহাজন ও জমিদারদের দখলে ছিল| সুদখোর মহাজন ও জমিদারদের সেই সব দখলীকৃত জমিতে ধান চাষ করেছিল| গরীব গ্রামবাসী ও আদিবাসীদের দখলীকৃত জমিতে সুদখোর মহাজন ও জমিদারদের চাষ করা ধান কেটে নিয়ে জমিগুলির প্রকৃত মালিক তথা গরীব গ্রামবাসী ও আদিবাসীদের মধ্যে বিলিয়ে দেবার পরিকল্পনা করলেন দিশম গুরু “গুরুজী” শিবু সরেন|
এই “ধান কাটো” আন্দোলন সাঁওতাল পরগনা ডিভিশনের সমস্ত জেলাগুলিতে দুর্দান্ত জনপ্রিয় হল ও দিশম গুরু “গুরুজী” শিবু সরেন সাঁওতাল পরগনা ডিভিশনে অবিসংবাদী নেতা রূপে উঠে এলেন|
সাঁওতাল পরগনা ডিভিশনের সাঁওতাল আদিবাসীরা দিশম গুরু “গুরুজী” শিবু সরেনকে সাক্ষাৎ ভগবান তথা “মারাং বুরু”-র অবতার রুপে পুজতে শুরু করল| সেই সময় সাঁওতাল পরগনা ডিভিশনের জেলাগুলিতে অধিকাংশ সাঁওতালদের জমি সুদখোর মহাজন ও জমিদারদের দখলে চলে গিয়ে সাঁওতালদের ভূমিহীন হিসেবে চরম কষ্টের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছিল| এই ভূমিহীন আদিবাসী সাঁওতালদের মধ্যে দিশম গুরু “গুরুজী” শিবু সরেন যেন সাক্ষাৎ ভগবান তথা “মারাং বুরু”-র অবতার রুপে অবতীর্ণ হল| আদিবাসী সাঁওতাল সমাজের দুঃখ, কষ্ট, শোষণ, নিপীড়ন দূর করতেই যেন দিশম গুরু “গুরুজী” শিবু সরেনের উদয় ঘটেছে| দিশম গুরু “গুরুজী” শিবু সরেনের “ধান কাটো” আন্দোলনের ডাক যেন এই বঞ্চিত শোষিত আদিবাসী সাঁওতালদের মনে নিজেদের জমির ফসল ঘরে তুলবার আশা জাগিয়ে তুলল| আদিবাসী সাঁওতালরা দলে দলে গ্রামের পর গ্রাম দিশম গুরু “গুরুজী” শিবু সরেনের “ধান কাটো” আন্দোলনে সামিল হতে লাগলেন| সমস্ত সাঁওতাল পরগনা ডিভিশন এই “ধান কাটো” আন্দোলনে আন্দোলিত হল|
এই “ধান কাটো” আন্দোলনের টেউ এ বিপদ গুনলেন সুদখোর মহাজনেরা| তাঁরা আদিবাসীদের জমির ফসল এত সহজে ছাড়তে রাজি নয়| স্থানীয় পুলিস প্রশাসনকে সাথে নিয়ে গরীব গ্রামবাসী ও আদিবাসীদের আটকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করল| কিন্তু তাতে দিশম গুরু “গুরুজী” শিবু সরেন বা “ধান কাটো” আন্দোলনকারীরা দমবার পাত্র নয়| পুলিস-প্রশাসনও বুঝতে পারল যে যখন সাঁওতাল পরগনা ডিভিশনের সমস্ত গরীব গ্রামবাসী ও আদিবাসীরা একজোট হয়ে সুদখোর মহাজন ও জমিদারদের দখলে থাকা নিজেদের জমির ধান কাটার আন্দোলনে সামিল হয়েছে, তখন এই বিশাল গণআন্দোলনকে আটকানোর চেষ্টা করা বৃথা| তাই পুলিস-প্রশাসন দিশম গুরু “গুরুজী” শিবু সরেন ও তাঁর সহযোগীদের গ্রেফতার করে এই আন্দোলনকে দমন করার চেষ্টা চালাল| অনেক সহযোগীকে গ্রেফতার করা সম্ভব হলেও দিশম গুরু “গুরুজী” শিবু সরেনের ছায়ারো সন্ধান পেল না পুলিস-প্রশাসন| অনেকবার পুলিস-প্রশাসনের সাথে দিশম গুরু “গুরুজী” শিবু সরেনের মুখোমুখি সাক্ষাৎ হলেও দিশম গুরু “গুরুজী” শিবু সরেনের উপস্থিত বুদ্ধি ও ছদ্মবেশের কাছে বোকা হতে হয়েছে|
আন্দোলনকে জারী রাখতে পরেশনাথ পাহাড়ের গভীর জঙ্গলকে আস্থানা হিসেবে বেছে নিলেন দিশম গুরু “গুরুজী” শিবু সরেন| এই পরেশনাথ পাহাড়ের গভীর জঙ্গল এতই গভীর ও বন্য জন্তুতে ভর্তি ছিল যে দিনের বেলাতেও প্রবেশ করতে ভয় করত| জঙ্গলের ভিতর কোনো কাঁচা-পাকা রাস্তা ছিলনা| পুলিস কোনো গাড়ি নিয়ে যেতে পারত না, আর পায়ে হেঁটে গেলেও জঙ্গলের রাস্তায় পথ হারিয়ে ফেলত| পুলিস ব্যর্থ হলে প্রশাসন মিলিটারিকে পর্যন্ত নামিয়েছিল দিশম গুরু “গুরুজী” শিবু সরেনকে গ্রেফতার করতে, কিন্তু তারাও ব্যর্থ হয়|
দিশম গুরু “গুরুজী” শিবু সরেন ও তাঁর সহযোগীরা ভূমিপুত্র হওয়ায় জঙ্গলের সমস্ত রাস্তা জানত| এই জঙ্গলের রাস্তায় মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে দিশম গুরু “গুরুজী” শিবু সরেন সমস্ত গ্রামগুলিতে পৌছে সাধারণ গ্রামবাসী ও আদিবাসীদের বোঝাতেন, সংগঠিত করতেন, তাদের দুঃখ, কষ্ট, সমস্যার কথা শুনতেন ও সমাধান করতেন| দিনের বেলা হাঁটতেন ও রাত্রী হলে গাছের ডালে ঘুমতেন| দিশম গুরু “গুরুজী” শিবু সরেনের এক অনুগামী ছিলেন, বিশাল চেহারা| হাঁটতে হাঁটতে দিশম গুরু “গুরুজী” শিবু সরেন ক্লান্ত হয়ে পড়লে গুরুজীকে কাঁধে তুলে নিয়ে হাঁটতেন সেই অনুগামী|
আন্দোলন জারি রাখতে রাখতেই দিশম গুরু “গুরুজী” শিবু সরেন সময়ে সময়ে বিভিন্ন ক্রান্তিকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন| ধান কাটো আন্দোলন থেকে যে ধান সংগ্রহ করা হত, তা তিন ভাগ করা হত| এক ভাগ পেতেন জমির আসল মালিক, দ্বিতৃয় ভাগ পেতেন সমস্ত গ্রামবাসীরা আর তৃতীয় ভাগ জমা করা হত একটি “গোলা”-য়| যখন কোন গ্রামবাসীর প্রয়োজন পড়ত, তখন সে ওই “গোলা” থেকে ধান নিতে পারত|
দিশম গুরু “গুরুজী” শিবু সরেন বুঝতে পেরেছিলেন যে নিরক্ষরতাই গরীব গ্রামবাসী ও আদিবাসীদের সর্বনাশের মূলে, নিরক্ষরতার কারনেই সুদখোর মহাজন ও লোভী জমিদারেরা গরীব গ্রামবাসী ও আদিবাসীদের ঠকিয়ে তাদের জমিগুলি দখল করে নিয়েছে| তাই গরীব গ্রামবাসী ও আদিবাসীদের সাক্ষর করে তুলতে বিশেষ পদক্ষেপ নেবার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেছিলেন দিশম গুরু “গুরুজী” শিবু সরেন| স্থাপন করেছিলেন Night School বা রাত্রীকালীন স্কুল| বিশেষ নজর দিয়েছিলেন নারীদের শিক্ষার ওপর|
দিশম গুরু “গুরুজী” শিবু সরেন এটাও বুঝতে পেরেছিলেন যে শুধুমাত্র ধান চাষের মাধ্যমে গরীব গ্রামবাসী ও আদিবাসীদের আর্থিক উন্নতি সম্ভব নয়| তাই গরীব গ্রামবাসী ও আদিবাসীদের উন্নত পদ্ধতিতে চাষ শেখানোর ব্যবস্থা করলেন দিশম গুরু “গুরুজী” শিবু সরেন| সেই সঙ্গে পরামর্শ দিলেন হাঁস, মুরগী, গরু, ছাগল সহ যাবতীয় পশুপালন করার| পশুপালনে গ্রামবাসী ও আদিবাসীদের উৎসাহ দিতে চালু করেছিলেন যৌথ পশুখামার, যেখানে সকল গ্রামবাসীরা সামিল হতে পারতেন|
সুখে, দুঃখে গরীব গ্রামবাসী ও আদিবাসীদের পাশে থাকা, তাদের সমস্যার কথা শোনা ও সমাধানের ব্যবস্থা করা, অন্যায়, অত্যাচার, শোষন, জুলুমের বিরুদ্ধে লড়তে শেখানো, নিজের বিপদের ঝুঁকির পরোয়া না করে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব প্রদান দিশম গুরু “গুরুজী” শিবু সরেনকে গরীব গ্রামবাসী ও আদিবাসীদের কাছে সাক্ষাৎ ভগবান তথা “মারাং বুরু”-র অবতার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল| দিশম গুরু “গুরুজী” শিবু সরেনই গরীব গ্রামবাসী ও আদিবাসীদের “সরকার”| দিশম গুরু “গুরুজী” শিবু সরেন যখনেই কোনো গ্রামে যেতেন, সেইখানেই সাধারণ মানুষদের নিজস্ব “সরকার” বসত| সেই “সরকারের” কাছে সাধারণ মানুষ অভাব, অভিযোগ জানাতেন, প্রতিকার চাইতেন| দিশম গুরু “গুরুজী” শিবু সরেন কাউকেই নিরাশ করতেন না, তাদের সমস্যার সমাধান করতেন, প্রতিকার প্রদান করতেন| দিশম গুরু “গুরুজী” শিবু সরেনের প্রভাব ও প্রতাপ এতটাই ছিল যে একবার কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলে সকলেই খুশি মনে মেনে নিতেন, এমনকি পুলিস-প্রশাসনও সরাচর মেনে নিত|
এমনই এক সময়ে একদিন কিছু লোক দিশম গুরু “গুরুজী” শিবু সরেনের সাহায্য চাইতে এলেন| বোকারো স্টিল প্লান্ট (Bokaro Steel Plant) নির্মানের কারনে মানুষগুলি উচ্ছেদ হয়েছিলেন| সুবিচারের জন্য দিশম গুরু “গুরুজী” শিবু সরেনের সাহায্য প্রার্থনা করেন| এই মানুষগুলিই দিশম গুরু “গুরুজী” শিবু সরেনকে বিনোদ বিহারী মাহাতোর বিষয়ে জানান|
বিনোদ বিহারী মাহাত বাবু একজন উকিল ও বড় মাপের মানুষ ছিলেন| বোকারো স্টিল প্লান্ট (Bokaro Steel Plant) নির্মানের কারনে উচ্ছেদ হওয়া মানুষগুলির সুবিচারের জন্য লড়াই করছিলেন| এই দিকে লাগাতার আন্দোলনের কারনে দিশম গুরু “গুরুজী” শিবু সরেন ও ওনার সহযোগীদের বিরুদ্ধে পুলিস-প্রশাসন অনেকগুলি মামলা দায়ের করেছিল| এই মামলার বিষয়ে কথা বলতে ও বিনোদ বিহারী মাহাতোর লড়াইকে সমর্থন জানাতে ওনার সঙ্গে দেখা করেন দিশম গুরু “গুরুজী” শিবু সরেন|
এই দুই মহান নেতার সাক্ষাৎ পরবর্তীকালে ঝাড়খণ্ডের ভাগ্য বদলে দেয়| একে অপরকে চিহ্নতে পারেন ও মুগ্দ্ধ হন| বিনোদ বিহারী মাহাতো দিশম গুরু “গুরুজী” শিবু সরেনের সাথে আলাপ করিয়ে দেন তরুন ইঞ্জিনিয়ার ও কয়লা শ্রমিকদের স্বার্থে আন্দোলনকারী এ কে রায়ের| এর পরের ঘটনা তো ইতিহাস| নতুন করে শুরু হল ঝাড়খণ্ড আন্দোলন| মহান সমাজসংস্কারক দিশম গুরু “গুরুজী” শিবু সরেন প্রবেশ করলেন রাজনীতিতে| ১৯৭২ সালের ৪ ঠা ফ্রেবুয়ারি তিন মহান আন্দোলনকারী গঠন করলেন “ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (Jharkhand Mukti Morcha – JMM)|
এর পরের ইতিহাস কমবেশী আমরা সকলেই জানি| এখানে আর লিখছি না| কোনো একদিন লিখব| এখানে লেখা তথ্যগুলি বিভিন্ন বই, ইন্টারনেট ও বিভিন্ন ঝাড়খণ্ড আন্দোলনকারীর মুখ থেকে শোনা| কোথাও কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে ক্ষমা প্রার্থনা করছি| ধন্যবাদ ও জোহার|