লিখেছেন – প্রদীপ কুমার হাঁসদা|
একসময় আদিবাসী মানুষদের অধিকার রক্ষায় আন্দোলন শুরু করেছিলেন দিশম গুরু শিবু সরেন| আর তাই অনেক মানুষের বিরাগভাজন হয়েছিলেন| সেই মানুষগুলো দিশম গুরু শিবু সরেনকে বার বার খুন করার চেষ্টা করেছিল| বাধ্য হয়ে দিশম গুরু শিবু সরেনকে গভীর জঙ্গলে আশ্রয় নিতে হয়েছিল| গভীর জঙ্গল থেকেই দিশম গুরু শিবু সরেনের আন্দোলন শোষকশ্রণীর মনে ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল|
টুণ্ডির পাহাড়ে আশ্রম স্থাপনের মাধ্যমে দিশম গুরু শিবু সরেন আদিবাসী মানুষদের সচেতন করার কাজ শুরু করেছিলেন| দিশম গুরু শিবু সরেন গঠন করেছিলেন “সনৎ সাঁওতাল সমাজ”| আদিবাসী মানুষদের মধ্য মদ, হাঁড়িয়া সহ যাবতীয় নেশা ত্যাগ করার জন্য প্রচার, পরিবারে শান্তি বজায় রাখা, গ্রামের মধ্যে সকলে মিলে মিশে থাকা, যাবতীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রচার, যৌথ খামার নির্মান করে চাষবাস ও পশুপালন করা, এইরকম বিভিন্ন প্রচারের মাধ্যমে আদিবাসী মানুষদের সচেতন করার চেষ্টা চালান দিশম গুরু শিবু সরেন| আদিবাসী মানুষদের শিক্ষিত করতে গড়ে তুলেছিলেন রাত্রীকালীন স্কুল| নিরাশ্রয় মানুষদের থাকার জন্য তৈরী করেছিলেন ডরমিটারি| আদিবাসী মানুষদের মধ্যে তরুন শিবু সরেনের এই প্রচার তাঁকে দিশম গুরু বানিয়ে দেয়| আদিবাসী মানুষেরা তাঁকে শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় নাম দেয় দিশম গুরু শিবু সরেন|
দিশম গুরু শিবু সরেনের টুণ্ডির আশ্রমে দিনে দিনে মানুষের ভীড় বাড়তে থাকা| গরীব আদিবাসী মূলবাসী মানুৃষেরা দিশম গুরু শিবু সরেনকে অভিযোগ জানাতে থাকে কিভাবে সুদখোর মহাজনেরা তাদের জমি জায়গা দখল করে তাদের নিঃস্ব করেছে| এর প্রতিকার করার জন্য গরীব আদিবাসী মূলবাসী মানুষেরা দিশম গুরু শিবু সরেনের কাছে কাতর নিবেদন জানালো| গরীব আদিবাসী মূলবাসী মানুষদের আবেদনে সাড়া দিয়ে দিশম গুরু শিবু সরেন ঠিক করলেন তাদের জমি ফিরিয়ে দেবার, সেই মত সুদখোর মহাজনদের অনুরোধ করলেন| কিন্তু চোর কি কোনোদিন ধর্মের বাণী শুনেছে? সুদখোর মহাজনেরা তাছিল্যভরে দিশম গুরু শিবু সরেনের অনুরোধ ফিরিয়ে দিল|
তরণ শিবু এবার হাতে তুলে নিলেন আদিবাবাসীদের প্রথাগত অস্ত্র তির ধনুক| নিজের অনুগামীদের নিয়ে দিশম গুরু শিবু সরেন সুদখোর মহাজনদের দখলে থাকা গরীব আদিবাসী মূলবাসীদের জমি পুনরোদ্ধার করে গরীব আদিবাসী মূলবাসীদের ফিরিয়ে দেন| সুদখোর মহাজনদের লেঠেল বাহিনী প্রতিরোধ করতে গেলেও দিশম গুরু শিবু সরেনের তিরের সামনে পড়ে পালাতে বাধ্য হয়| এই খবর ছড়িয়ে পড়তে দলে দলে জমিহারা মানুষেরা দিশম গুরু শিবু সরেনের কাছে এসে নিজেদের জমি সুদখোর মহাজনদের কাছ থেকে ফিরিয়ে দেবার অনুরোধ জানাতে থাকে| দিশম গুরু শিবু সরেন গরীব আদিবাসী মূলবাসীদের কাছে রবিনহুড রুপে প্রতিষ্ঠিত হলেন, পরিনত হলেন ন্যায়বিচারের মিথ রুপে| টুণ্ডির আশ্রম পরিনত হল গরীব মানুষদের ন্যায়বিচারের কেন্দ্র রুপে| গরীব মানুষেরা এখানে ন্যায়বিচারের আশায় আসতেন| দিশম গুরু শিবু সরেন এখানে জনতার দরবার বসিয়ে ন্যায়বিচার করতেন| মানুষেরা ন্যায়বিচার পেয়ে দিশম গুরু শিবু সরেনের নামে জয় ধ্বনি করতে করতে ফিরে যেত|
(ক্রমশ…..)