গত ২৮/০২/২০২০ (শুক্রবার) মালদা জেলার হবিবপুর ব্লকে আদিবাসী সমাজের নিয়মবিরোধী গণবিবাহ আয়োজনের বিরুদ্ধে হবিবপুর ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক (BDO)-কে শান্তিপূর্ণ ব়্যালি প্রদর্শন ও ডেপুটেশনের মাধ্যমে স্মারকলিপি (Memorandum) প্রদান করল বিভিন্ন আদিবাসী সংগঠনগুলির যৌথ মঞ্চ আদিবাসী একতা মঞ্চ| হবিবপুর ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক (BDO)-কে স্মারকলিপি প্রদানের মাধ্যমে দাবী জানানো হয় যাতে আদিবাসী সমাজের নিয়মনীতি বিরোধী আদিবাসীদের গণবিবাহ আয়োজনের কাজ থেকে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিরত থাকেন|
ওইদিন মোট ১০টি সংগঠন এই প্রতিবাদ আন্দোলনে সামিল হয়েছিল| এই আন্দোলনে সামিল হয়েছিল
১) আদিবাসী সেঙ্গেল অভিযান,
২) রাষ্ট্রীয় আদিবাসী একতা পরিষদ,
৩) ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল,
৪) মাঝি পারগানা গাঁওতা,
৫) আসেকা,
৬) আদিবাসী জমি রক্ষা কমিটি,
৭) আদিবাসী কল্যাণ সমিতি,
৮) রাষ্ট্রীয় আদিবাসী মূলনিবাসী মাঝি ল মহল,
৯) ঝাড়খণ্ড দিশম পার্টি বা JDP,
১০) বহুজন মুক্তি পার্টি বা BMP|
কেন্দ্পুকুর বাদল মাঠ থেকে হবিবপুর ব্লক পর্যন্ত প্রতিবাদ ব়্যালি করা হয়| ওই দিন প্রতিবাদ ব়্যালিতে প্রায় ৬০০০ আদিবাসী মানুষ অংশগ্রহণ করেন|
হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএস (RSS) এর শাখা সংগঠন “বিশ্ব হিন্দু পরিষদ” আগামী ৮ই মার্চ, ২০২০ আদিবাসীদের নিয়ে এক গণবিবাহের আয়োজন করেছে মালদা জেলার হবিবপুর ব্লকের কেন্দ্পুকুর উচ্চ বিদ্যালয়ে যা পুরোপুরি আদিবাসী সমাজের নিয়মনীতির বিরোধী l এর আগেও “বিশ্ব হিন্দু পরিষদ” গত ০২ রা ফ্রেবুয়ারি, ২০২০ মালদা জেলার আটমাইল এ আদিবাসী সমাজের নিয়মনীতি বিরোধী আদিবাসী গণবিবাহের আয়োজন করেছিল, যা নিয়ে চরম অশান্তি হয়েছিল| আদিবাসীদের গণবিবাহের খবর জানতে পেরে আদিবাসী সেঙ্গেল অভিযান এবং ঝাড়খণ্ড দিশম পার্টি (JDP) প্রতিবাদ জানাতে গণবিবাহ অনুষ্ঠানস্থলে গিয়ে রুখে দাঁড়ায় ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে| বিষয়টি থানা পুলিস থেকে কলকাতা হাইকোর্ট অবধি গড়ায়|
এরই মধ্যে আগামী ০৩ রা মার্চ ২০২০ পশ্চিমবাংলা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে দাড়িয়ে থেকে আদিবাসীদের গণবিবাহ দেবেন বলে ঘোষনা করেন| এই গণবিবাহে অংশগ্রহণকারী আদিবাসী মেয়েদের “রুপশ্রী” প্রকল্প থেকে ২৫,০০০/- টাকা করে সরকারের তরফ থেকে দেবার কথা জানান|
সমস্ত বিষয়টি নিয়ে আদিবাসী সমাজের মানুষজন চরম ক্ষুদ্ধ| আদিবাসী সমাজের বিভিন্ন সংগঠনের সাফ কথা যে আদিবাসী সমাজে গণবিবাহের কোনো স্থান নেই| আদিবাসী সমাজের নিজস্ব বিবাহ পদ্ধতি রয়েছে| আদিবাসী সমাজের বিয়ের নিয়মকানুন হিন্দু/মুসলিম/খৃষ্ঠান বা অন্যান্য ধর্মের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা| আর বিয়ের মতন সামাজিক বিষয় নিয়ে অ-আদিবাসীদের হস্তক্ষেপ আদিবাসীরা কোনোমতেই বরদাস্ত করবে না| আদিবাসী সামাজিক সংগঠনগুলি মনে করছে যে আদিবাসীদের গণবিবাহের আয়োজন করে আদতে আদিবাসীদের হিন্দুকরণের অপচেষ্টা হচ্ছে| আদিবাসী সামাজিক সংগঠনগুলি মনে করছে যে এই গনবিবাহ আদিবাসী সমাজকে পুরো পঙ্গু করার এক চক্রান্ত| এসমস্ত গণবিবাহ আদিবাসী সমাজকে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করার এক মাধ্যম হয়ে উঠেছে উচ্চবর্ণীয় শাসক এবং মনুবাদী সংগঠনগুলোর l এসমস্ত গণবিবাহ সম্পন্ন হতে থাকলে আদিবাসী সমাজের সামাজিক পরম্পরা, রীতিনীতি, এবং আদিবাসী সমাজ ব্যবস্থা বিকলাঙ্গ হয়ে পড়বে l আদিবাসী সামাজিক সংগঠনগুলি এও মনে করছে যে আদিবাসীদের হিন্দুকরণের পথে একই গাড়িতে সওয়ার হয়েছেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়|
বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আদিবাসী সামাজিক সংগঠনগুলির অনুরোধ, আপনারা যদি আদিবাসীদের সত্যিকারের উন্নতি চান তো, আদিবাসীদের নিজেদের মাতৃভাষায় শিক্ষার সুযোগ করে দিন, আদিবাসীদের নিজস্ব ধর্ম সারি/সারনা এর স্বীকৃতির ব্যবস্থা করুন, আদিবাসী মহিলাদের ধর্ষনকারীদের ফাঁসিতে ঝোলানোর ব্যাবস্থা করুন, আদিবাসীদের নিজস্ব স্বশাসন ব্যাবস্থা মাঝি-পারগানা ব্যাবস্থাকে সরকারি স্বীকৃতি প্রদানের ব্যাবস্থা করুন, আদিবাসী মাঝিবাবাদের সরকারী ভাতার ব্যাবস্থা করুন|
সংবাদ সূত্র – মঙ্গল মুর্মু|