LOADING

পুরুলিয়ার দিনমজুর ঝুকা বাউ়ড়ি স্কুলকে জমি দান করলেন|

Spread the love

নিজে স্কুলছুট| বর্তমানে দিনমজুর| কোনও দিন কাজ জোটে, কোনও দিন জোটে না| ঘুপচি ঘরের সংসারে অভাব নিত্যসঙ্গী| পুরুলিয়ার নিতুড়িয়ার বিন্দুইডির সেই দিনমজুর ঝুকা বাউ়ড়ি গ্রামের প্রাথমিক স্কুলকে নিজের ৩ ডেসিমিল জমি দান করলেন| ঝুকা বাউরি নিজে বিন্দুইডির ওই স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন| অনটনের জন্য পড়া চালিয়ে যেতে পারেননি| ওই স্কুল থেকে প্রাথমিকের গণ্ডী পার করে পড়ায় ইতি টানতে হয়েছে তাঁর ছেলেকেও। কিন্তু আজও নিজের অভাব-অনটনের থেকে ঝুকার বেশি কষ্ট হয় রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে বাচ্চাগুলোকে মিড-ডে মিল খেতে দেখলে| রঘুনাথপুরে রেজিষ্ট্রি অফিসে গিয়ে স্কুলের নামে করে জমি দানপত্র করে দিয়েছেন ঝুকা| রেজিষ্ট্রি অফিসে বসে তিনি বলেন, ‘‘ফাঁকা জায়গায় বসে দুপুর রোদে বাচ্চাগুলো খাবার খায়। বৃষ্টি এলে থালা নিয়ে বারান্দায় ছোটে। দেখে খারাপ লাগত| আমরা দুপুরের খাবার পাইনি| এই বাচ্চাগুলো পাচ্ছে| স্কুলের পাশেই আমার জমি। যাতে ওরা একটু ভাল ভাবে খেতে পারে সেই ভেবে দিয়ে দিলাম|’’
বিন্দুইডি প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক সৌমেন্দ্রনাথ মণ্ডল জানান, সেখানে ছাউনি দেওয়া মিড-ডে মিল খাওয়ার জায়গা তৈরি হবে| বাড়তি জমিতে হবে কিচেন গার্ডেন|
এই স্কুলের সঙ্গে অবশ্য ঝুকার যোগ আরও আগে থেকে| বিন্দুইডি গ্রামের বাসিন্দা তাঁরই তিন আত্মীয়ের দেওয়া জমিতে গড়ে উঠেছে বিন্দুইডি প্রাথমিক স্কুল| প্রধান শিক্ষক সৌমেন্দ্রনাথ মণ্ডল জানান, ১৯৬২ সালে বিন্দুইডি গ্রামে মাত্র এক ডেসিমিল সরকারি জমিতে তৈরি হয়েছিল স্কুলটি| সামান্য জায়গায় স্কুল চালানো সম্ভব হচ্ছিল না| পরে মিতু বাউড়ি, লালমোহন বাউড়ি ও তারাপদ বাউড়ি তাঁদের ১২ ডেসিমিল জমি দান করেন| ২০১০ সালে ওই জমিতে গড়ে ওঠে স্কুলের নতুন বাড়ি|
ঝুকা যখন স্কুলের জন্য জমি দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে আসেন, সবাই চমকে উঠেছিলেন| কেউ কেউ বিশ্বাস করতে চাননি| সরকারি হিসেবেই ওই জমির দাম ৬৬ হাজার টাকা। আর বাজারদর তার থেকে অনেকটাই বেশি – লক্ষাধিক টাকা| এখন তাঁরাই মানছেন, বছর পঞ্চাশের ওই প্রৌঢ় অন্য ধাতুতে গড়া|
জমি তো পাওয়া গেল, কিন্তু সেখানে কী হবে? শিক্ষকরা যখন এই নিয়ে ভাবছেন, ঝুকাই প্রস্তাব দেন, মিড-ডে মিল খাওয়ার একটা জায়গা তৈরি করা হোক। এক কথায় রাজি হয়ে যান স্কুলের সবাই|
জমি রেজিষ্ট্রেশনের প্রক্রিয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় টাকা জোগাড়ের জন্য তদ্বির| প্রধান শিক্ষক জানান, ঝুকার সঙ্গে জমি দেওয়ার চুক্তি করে সেই নথি নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় দরবার শুরু করেছিলেন তাঁরা| শেষ পর্যন্ত রাজ্যসভার এক সাংসদ ৫ লক্ষ ৩৯ হাজার টাকা নিজের এলাকা উন্নয়ন তহবিল থেকে বরাদ্দ করেন| প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘বরাদ্দের ৬০ শতাংশ টাকা স্কুলের অ্যাকাউন্টে চলে এসেছে। জমিও পাওয়া গেল। এ বারে আমরা দরপত্র ডেকে দ্রুত কাজ শুরু করে দেব|”
নিতুড়িয়া ব্লকের বিন্দুইডি গ্রামের এই প্রাথমিক স্কুল অন্য ভাবেও কিছুটা ব্যতিক্রমী| গত বছর শিশুমিত্র পুরস্কার পেয়েছে এই স্কুল| পড়ুয়ারা এখানে শুধু পড়াশোনা নিয়ে থাকে না| ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে থেকেই প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী, ক্রীড়ামন্ত্রী নির্বাচিত করে স্কুল পরিচালনার কাজে সক্রিয় ভাবে যুক্ত করা হয়| স্কুলের মিড-ডে মিল দেখার জন্য গ্রামের এক মহিলাকে ‘ভোজনমাতা’র দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। স্কুলের শিক্ষক সুব্রত শিট বলেন, ‘‘আমরা স্কুলটিকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে চাইছি| ডাইনিং শেড খুবই জরুরি ছিল| ঝুকাবাবুর এই সাহায্য গ্রামবাসী মনে রাখবেন।’’
তথ্য সূত্র – সুমন্ত বাউরির মুখবই দেওয়াল থেকে| (পাপ্পু দা সংগৃহিত)

Loading