একসময় যে মাওবাদী নেতার দাপটে তটস্থ হয়ে থাকত ঝাড়খণ্ডের সাধারণ জনতা থেকে পুলিস প্রশাসন, সেই দুর্ধর্ষ মাওবাদী নেতা কুন্দন পাহান এবারের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন| প্রাক্তন মাওবাদী নেতা কুন্দন পাহানকে ভোটে লড়াইয়ের অনুমতি দিয়েছে এনআইএ–র বিশেষ আদালত। বর্তমানে হাজারিবাগের জেলে বন্দি আছেন কুন্দন পাহান| বিচারাধীন বন্দি হিসেবে কারাগার থেকেই তামাড় কেন্দ্র থেকে ঝাড়খণ্ড পার্টির হয়ে ভোটে লড়ছেন প্রাক্তন মাওবাদী নেতা কুন্দন পাহান|
পাতলা ছিপছিপে চেহারা, হালকা গোঁফের লম্বাটে মুখের কুন্দন পাহানকে তামাম ঝাড়খণ্ডবাসী নামে চিনলেও চোখে দেখেননি অধিকাংশ মানুষই। আঁড়কি থানার বারিগাড়া গ্রামে বাড়ি কুন্দন পাহানের। আজ থেকে উনিশ বছর আগে সমাজ বদলের স্বপ্ন নিয়ে সিপিআই (মাওবাদী) সংগঠনে নাম লেখান। তারপর একের পর এক নাশকতা, মন্ত্রী-সাংসদকে খুন, ব্যাংকের ক্যাশ ভ্যান থেকে টাকা–গয়না লুঠ করে বাংলা–ঝাড়খণ্ড পুলিশের কাছে হয়ে গিয়েছিলেন ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’। দু’হাতে আগ্নেয়াস্ত্র চালাতে দক্ষ। শতাধিক মামলা তাঁর বিরুদ্ধে। পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালানো ছিল তাঁর বাঁয়ে হাত কা খেল। একসময় বাংলা-ঝাড়খণ্ড পুলিশের ত্রাস মাওবাদী নেতাকে জালে আনতে ১৫ লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে পরে তিনি আত্মসমর্পণ করে ফিরে আসেন সমাজের মূল স্রোতে।
মাওবাদী হলেও এলাকায় তুমুল জনপ্রিয় কুন্দন পাহান| এলাকার মানুষের কাছে রবিনহুড তিনি| আর তাই জেলে বন্দি থাকলেও তাঁর হয়ে ভোটের প্রচারে হাজার হাজার অনুগামী। শহর থেকে গ্রামে ঘুরছে প্রচার ভ্যান। রাঁচি জেলার তামাড় বিধানসভার প্রেমনগরের মত অজ পাড়া গাঁয়েও তাঁর নামে ব্যানার। প্রতীক – ফলভরতি ঝুড়ি। ঝাড়খণ্ডের হাজারিবাগ জেলে থেকেই ভোটে লড়াই চলছে তাঁর। বুন্ডু শহরে জামশেদপুর–রাঁচি ৩৩ নম্বর জাতীয় সড়কে তাঁর দলের বড় কার্যালয়ের পাশে পেল্লাই সাইজের হোর্ডিং। আলো ঝলমলে সেই নির্বাচনী কার্যালয় ভোটের আগের দিনও গমগম করছে|
অবশ্য কয়েকদিন আগেই এই বিধানসভায় তাঁর খাসতালুক খুঁটি জেলার আঁড়কি থানা এলাকাতে কুন্দন পাহানের বিরুদ্ধে পোস্টার দেয় মাওবাদীরা। যার বয়ান ছিল, “গদ্দার কুন্দন পাহান ভোট চাইতে এলে তাকে লাথি মেরে তাড়াও।” কিন্তু ঝাড়খণ্ড পার্টির সদস্য সমর্থকেরা মনে করছেন, এলাকাবাসীকে বিভ্রান্ত করতে ওই পোস্টার ছিল বিরোধীদের চক্রান্ত। সংসদীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাস না থাকলেও এই ভোটে ‘মাওবাদী’রা কুন্দন পাহানের পাশে রয়েছেন।
ঝাড়খণ্ড পার্টির এক কার্যকর্তা তথা কুন্দন পাহানের বাল্যবন্ধু অজয় চৌধুরি জানান, “জঙ্গলে থেকে কুন্দন পাহান প্রান্তিক মানুষজনের হয়ে লড়াই করছিলেন, এখন বিধানসভায় গিয়ে তাঁদের হয়ে লড়াই করতেই কুন্দন পাহান বিধানসভার ভোটে প্রার্থী হয়েছেন।