শিয়ালদার কোলে মার্কেট মেসের চার তলায় পৌঁছলে আচমকা মনে হতেই পারে কোনও এক আদিবাসী গ্রাম নাকি! কানে ভেসে আসবে আদিবাসী কথা। চোখের সামনে তখন আদিবাসী জীবনযাত্রা।
না, আসলে এটা কোনও আদিবাসী গ্রাম নয়। কলকাতা ময়দানে প্রতি বছরই প্রচুর আদিবাসী ফুটবলার আসে খেলতে। সেই ফুটবলাররাই চোখে বড় ফুটবলার হওয়ার একরাশ স্বপ্ন নিয়ে আস্তানা বানায় কোলে মার্কেটের বাবলু কোলের এই মেসবাড়িতে। কেউ আসেন পুরুলিয়া থেকে, কেউ আবার বাঁকুড়া, এছাড়াও ঝাড়খণ্ড, ঝাড়গ্রাম থেকেও মান্ডি, হেমব্রম পরিবারের ছেলেরা থাকেন।
প্রতি বছরই কলকাতা লিগে নানা ক্লাবে খেলা এই আদিবাসী ফুটবলারদের সংখ্যা নেহাত কম নয়। চলতি মরশুমের ঘরোয়া লিগের সব ডিভিশন মিলিয়ে সেই সংখ্যাটা দুশোর কাছাকাছি।
নিম্ন, মধ্যবিত্ত পরিবার থেকেই জীবনে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে কলকাতায় আসা। অনেকে আবার কলকাতার আশেপাশের মফস্সল এলাকার ফুটবলাররাও খেলেন লিগে। বড় ক্লাব খেলে তাঁদের মধ্যে অনেকেই সরকারি চাকরিতে মাথা গুঁজে দিয়েছেন। যেমন, সিইএসসি – তে রয়েছেন শঙ্কর ওঁরাও, জিতেন মুর্মু; চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ ওয়ার্কসে (সিএলডব্লু)– ফুলচাঁদ হেমব্রম, গৌতম কুজুর; মেট্রোতে অনিল কিস্কু ছাড়াও অনেকে এরকমই চাকরি করছেন খেলার পাশাপাশি।
লড়াকু মনোভাব, গায়ের জোর— আদিবাসী ফুটবলারদের এহেন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলোই নানা দলের কাছে সম্পদ। চলতি লিগে বেশ কয়েকজন আদিবাসী ফুটবলার নজর কেড়েছেন। গোল করেছেন।
প্রিমিয়ার–‘এ’ ডিভিশনের ক্লাব পিয়ারলেসে এবার আদিবাসী ফুটবলারের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। পুরুলিয়ার ফুলচাঁদ, লক্ষ্মী মান্ডি, বাঁকুড়ার জিতেন, শুভেন্দু মান্ডি, ঝাড়খণ্ডের অনিল কিস্কু, সোদপুরের সোনা সর্দাররা রয়েছেন কোচ জহর দাসের পিয়ারলেস দলে। দলকে চ্যাম্পিয়নশিপের দৌড়ে রাখতে এঁদের ভূমিকার প্রশংসা শোনা গিয়েছে জহরের গলায়।
বিএসএস দলে রয়েছে সোদপুরের গৌতম কুজুর, বুধিরাম টুডু, জগন্নাথ ওঁরাও, লাল্টু হেমব্রম, সুনীল ওঁরাওরা। সাদার্ন সমিতিতে খেলছেন অর্জুন টুডু। এরিয়ানে সন্দীপ ওঁরাও, সান্নিক মুর্মু, জর্জে বাবলু ওঁরাও, রেনবোতে অ্যান্টনি সোরেন, সুখদেব মুর্মু। এছাড়াও ইউনাইটেড স্পোর্টস–সহ লিগের অন্যান্য ডিভিশনের দলেও আদিবাসী ফুটবলাররা দাপিয়ে খেলছেন।
ফুলচাঁদ বলছেন, ‘গ্রামে ফুটবল এখনও অনেকে ভালবাসে। আমাদের গ্রামে স্কুলের হস্টেল থেকে ক্যাম্প হয়। সেখানেই আদিবাসী তরুণ খেলোয়াড়রা যায় ট্রায়ালে। তাদের খেলা দেখে নির্বাচকদের পছন্দ হয়ে গেলেই কলকাতায় আসার সুযোগ আসে।’ একটু থেমে জুড়ে দেন, ‘সরকারের তরফে জঙ্গলমহলে ফুটবলের উন্নতির জন্য নানা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সেখান থেকেও আদিবাসী ফুটবলার উঠে আসছে।’ সোনা সর্দারের কথায়, আদিবাসী ফুটবলারদের হার–না– মানা মানসিকতার জন্য কোচেরা খুব পছন্দ করে। প্রথম এগারোতে সুযোগ দেয়। নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ পায় তাঁরা|
তথ্য সূত্র – Vivekananda Saren|
ছবি – প্রতীকি (বল দখলের লড়াই এ অর্জুন টুডু )