দুটি স্কুলের প্রায় ১৫০ আদিবাসী পড়ুয়াকে নতুন পোষাক কিনে দেবার জন্য ২০ হাজার টাকা দিলেন চিত্তরঞ্জনের প্রাক্তন কর্মী প্রণব রায় ও তাঁর স্ত্রী রত্না রায়।
এই বছর পুজো শুরুর মুখেই জামুড়িয়া থানার পরাশিয়া অঞ্চলের দু’টি আদিবাসী স্কুলের প্রায় শ’দেড়েক শিশুর জন্য প্রধান শিক্ষক শ্রীকান্ত গোপের হাতে ২০ হাজার টাকা তুলে দিলেন চিত্তরঞ্জনের প্রাক্তন কর্মী প্রণব রায় ও তাঁর স্ত্রী রত্না রায়। ওই শিশুদের কিছু জামাকাপড় কিনে দেন জামুড়িয়া থানার পুলিশকর্মীরাও।
গত ০২ রা অক্টোবর, ২০১৯ ‘এই সময়’ পত্রিকার একটি প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছিল এই আদিবাসী শিশুদের কথা। সেই খবর পড়েই এই খুদেদের জন্য কিছু একটা করার সিদ্ধান্ত নেন রূপনারায়ণপুরের বাসিন্দা প্রণব ও রত্না। ৭৯ বছরের প্রণব এদিন বলেন, ‘আমরা প্রথম দিন থেকেই এই সময় পত্রিকার পাঠক। এখানে এমন প্রচুর খবর প্রকাশিত হয় যাতে বহু মানুষের দুর্দশার কথা আমরা জানতে পারি। সেই মতো তাঁদের পাশে দাঁড়াতে পারি। তাতে অনেকেরই সমস্যার সমাধান হয়।’
ওই একই খবরে এদিন দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের কথা জানতে পারেন জামুড়িয়া থানা পুলিশও। তাঁদের তরফেও এই পড়ুয়াদের হাতে নতুন জামাকাপড় তুলে দেওয়া হয়। পুজোর আগে নতুন জামা পেয়ে খুশি প্রতিটি ছাত্রছাত্রী ও তাদের অবিভাবকেরা।
জামুড়িয়ার পড়াশিয়ায় রয়েছে স্কুলছুট আদিবাসী ছাত্র-ছাত্রীদের দু’টি স্কুল। এই ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলমুখী করে শিক্ষার আলোয় আনার চেষ্টা করা হয়েছিল ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। তৎকালীন পুলিশ কমিশনার লক্ষ্মীনারায়ণ মিনা এবং জামুড়িয়ার ওসি পার্থ ঘোষের উদ্যোগে। তখন এই দু’টি স্কুল চালু হয়। এই স্কুলে বর্তমানে প্রায় ১৫০ জন ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। এলাকার খুবই দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েরা এখানে পড়তে আসে। প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পঠনপাঠন হয়। পড়ুয়াদের অভিভাবকরা দিনমজুরি করেন, ভ্যান চালান। তবে বেশিরভাগ অভিভাবক ইটভাটায় কাজ করেন। অতীতে কেন্দা ফাঁড়ির ওসি মলয় দাস নিজের উদ্যোগে পুজোর সময় নতুন জামাকাপড় দিতেন এই ছেলেমেয়েদের। স্কুল খোলার পর গত দু’বছর তিনি পুজোর পোশাক দিয়েছেন। কিন্তু, এখন তিনি অন্যত্র বদলি হয়ে গিয়েছেন। জামুড়িয়া থানার আধিকারিক পার্থ ঘোষও আদিবাসী ছাত্রছাত্রীদের খোঁজখবর রাখতেন| কিন্তু তিনিও বদলি হয়েছেন|
পার্থবাবু ও মলয়বাবু দু’জনেই বদলি হয়ে যাওয়ায় কোনও ভাবে ছাত্রছাত্রীরা সমস্যাগুলি নজরের বাইরে চলে গিয়েছিল। খবর প্রকাশিত হওয়ার পরেই জামুড়িয়া থানার ওসি সুব্রত ঘোষ এদিন ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে নতুন জামাপ্যান্ট তুলে দেন।
দুর্গাপুজো সামনে চলে আসছিল। তাই প্রতিদিনই আদিবাসী পড়ুয়ারা শিক্ষককে জিজ্ঞাসা করত – ‘স্যার আমাদের জামা-প্যান্ট কবে দেওয়া হবে?’ শিক্ষক তাদের প্রশ্নের কোনও উত্তর দিতে পারতেন না। তাঁর পক্ষে সবাইকে নতুন পোশাক দেওয়া সম্ভব নয়। তিনি নিজেই খুব সামান্য টাকা বেতন পান। কেন্দা ফাঁড়ির পড়াশিয়া এলাকার এই স্কুলের পড়ুয়াদের কেউ জামা-প্যান্ট দিন, এমনটাই চাইছিলেন শিক্ষক থেকে অভিভাবকরা।
সংবাদ সৌজন্য – এইসময়, ০২ ও ০৫ অক্টোবর, ২০১৯|