LOADING

পশ্চিমবঙ্গে ২৫ হাজার জাল কাস্ট সার্টিফিকেটের হদিশ, বাতিলের নির্দেশ প্রশাসনের।

Spread the love

দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাল কাস্ট সার্টিফিকেট ব্যবহারের অভিযোগ করে আসছে বিভিন্ন তপসিলী জাতি-উপজাতি সংগঠনের নেতা কর্মীরা। আদিবাসীদের সংগঠন ‘পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী কল্যাণ সমিতি’ সংগঠনটি তৈরিই হয়েছে জাল তপসিলী উপজাতি সার্টিফিকেট ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার জন্যই। পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী কল্যাণ সমিতি ও অনান্য আদিবাসী সংগঠনগুলি লাগাতার আন্দোলন করে চলেছে এই জাল তপসিলী উপজাতি সার্টিফিকেট ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে। নিয়মিত ভাবে সরকারি দফতর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অনান্য ক্ষেত্রে যেখানে জাল সার্টিফিকেট ব্যবহারের অভিযোগ এসেছে বা সন্দেহ লেগেছে, সেখানেই আধিকারিকদের কাছে চিঠি দেওয়া, দরবার করা, ডেপুটেশেন দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী কল্যাণ সমিতি ও অনান্য আদিবাসী সংগঠনগুলি।

এবার পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তর নবান্নও এই জাল জাতিগত শংসাপত্র বিষয়ে নড়েচড়ে বসেছে। সম্প্রতি সরকারের এক রিপোর্ট অনুসারে সারা রাজ্যে প্রায় ২৫ হাজার জাল জাতিগত শংসাপত্র এর খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। এই তালিকা সারা রাজ্যের জেলাশাসকদের কাছে পাঠিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন থেকে শিক্ষক নিয়োগ, ভুয়ো জাতিগত শংসাপত্র দাখিল করে অন্যায্য সুবিধা নেওয়ার একাধিক অভিযোগ আগেই ছিল। এই বিষয় নিয়ে মামলাও হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। এই আবহে সামনে এল জাতিগত শংসাপত্র নিয়ে বড়সড় ‘রিপোর্ট।’ এক বিশেষ সুত্র থেকে জানা গিয়েছে যে সারা রাজ্যজুড়ে ২৫ হাজারের বেশি ভুয়ো জাতিগত শংসাপত্র বণ্টন হয়েছে। যোগ্য প্রাপক না হয়েও শংসাপত্র বাগিয়ে নিয়েছেন বহু মানুষ। তবে রাজ্য সরকারের প্রশাসন মনে করছে, এক-দু’টি ক্ষেত্রে ভুলচুক হওয়ার সুযোগ থাকলেও এত বিপুল সংখ্যায় ভুয়ো জাতিগত শংসাপত্র ইস্যরি পিছনে রয়েছে সংগঠিত চক্রান্ত।

সূত্রের খবর, ২৫ হাজার ভুয়ো শংসাপত্র প্রাপকের মধ্যে ‘মাহাত’বা ‘মাহাতা’পদবির প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার জন রয়েছেন। তাঁদের তফসিলি উপজাতির (এসটি) শংসাপত্র ইস্যু করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীর উপস্থিতিতে এক বৈঠকে এই তথ্য সম্বলিত রিপোর্ট তুলে ধরা হয়। তখনই এর সঙ্গে জড়িত কর্মী বা আধিকারিকদের চিহ্নিত করে শোকজের নির্দেশ দেন নবান্নের শীর্ষকর্তারা। সন্তোষজনক জবাব না দিতে পারলে তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করতে পারে রাজ্য।

প্রসঙ্গত, উত্তরবঙ্গে কিছু জায়গায় বইগা সম্প্রদায়ভুক্ত মাহাত পদবির মানুষ আছেন। তাঁরা আগে থেকেই এসটি ছিলেন। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মাহাত পদবির মানুষজন অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) তালিকাভুক্ত। বইগা সম্প্রদায়ের অধিকাংশের কাছে এসটি শংসাপত্র আগে থেকে আছে। তাহলে নতুন করে কারা পেলেন শংসাপত্র? এই প্রশ্ন উঠতে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। ২৫ হাজার নামের জেলাভিত্তিক তালিকা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট জেলাশাসকদের জানিয়ে দেন অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দপ্তরের সচিব সঞ্জয় বনশল। আরও দেখা যায়, রায়, মণ্ডল (প্রাপ্ত উপাধি বাদ দিয়ে), এমনকী কিছু ক্ষেত্রে চট্টোপাধ্যায়, বন্দ্যোপাধ্যায় পদবির লোকজনও এসটি সার্টিফিকেট পেয়েছেন। এই প্রেক্ষিতে মুখ্যসচিব জেলাশাসকদের দ্রুত কড়া পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছেন। ‘ভুল করে’ইস্যু হওয়া প্রতিটি শংসাপত্রের তথ্যানুসন্ধান করে তা বাতিল করতে হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। আগামী দিনে এই শংসাপত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে আরও সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে  জেলাগুলিকে।

প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার ‘মাহাত’-কে এসটি সার্টিফিকেট দেওয়া প্রসঙ্গে কুড়মি সমাজের প্রতিনিধি রাজেশ মাহাত বলেন, ‘আমরা এসটি তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্যই লড়ছি। কেন্দ্র এখনও সেই ছাড়পত্র দেয়নি। তার আগেই মাহাতদের এসটি শংসাপত্র দেওয়া হয়ে থাকলে তার দায় প্রশাসনের।‘ অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বন প্রতিমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা বলেন, ‘জেনারেল ক্যাটিগরির মানুষও তফসিলি শংসাপত্র পাচ্ছে বলে অভিযোগ এসেছে। প্রশাসন কড়া ব্যাবস্থা নিচ্ছে।’

Loading