লিখেছেন – প্রদীপ কুমার হাঁসদা| কেন্দ্রীয় সভাপতি, ভারত দিশম মাঝি মাডোয়া|
এই ধান সিং মুণ্ডারি দিশম গুরু শিবু সরেনের প্রাণরক্ষক| সেই সময় দিশম গুরু শিবু সরেনের নেতৃত্বে “ধান কাটো” আন্দোলন চলছিল| গরীব সাধারণ মানুষ ও আদিবাসীদের জমি ছল চাতুরি করে সুদখোর মহাজন ও জমিদারেরা দখল করে নিয়েছিল| গরীব সাধারণ মানুষ ও আদিবাসীদেরকে নিজেদের জমিতে চাষ করাতো আর ধান পাকার সময় হলে সুদখোর মহাজন ও জমিদারেরা লোকেরা কেটে নিত|
দিশম গুরু শিবু সরেন ডাক দিয়েছিলেন “ধান কাটো” আন্দোলন| দিশম গুরু শিবু সরেন ডাক দিয়েছিলেন যে যার জমি, সেই ধান কেটে ঘরে তুলবে| আর সুদখোর মহাজন ও জমিদারেরা লোকেরা বাধা দিতে এলে রুখে দাড়াতে হবে|
এই “ধান কাটো” আন্দোলন সারা সাঁওতাল পরগণায় দাবানলের আগুনের মতন ছড়িয়ে পড়ল| দলে দলে গরীব সাধারণ মানুষ ও আদিবাসীরা নিজেদের জমির পাকা ধান কেটে ঘরে তুলতে লাগল| সুদখোর মহাজন ও জমিদারেরা লোকেরা বাধা দিতে এলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ শুরু হল| সুদখোর মহাজন ও জমিদারদের দোসর ঘুষখোর পুলিস এই “ধান কাটো” আন্দোলনকে দমন করতে সচেষ্ট হল, কোথাও কোথাও গুলিও চালাল| অনেক আন্দোলনকারি মারা গেল| কিন্তু এই “ধান কাটো” আন্দোলনকে দমন করা গেল না বরং তা আরো ব্যাপক আকার ধারণ করল|
সুদখোর মহাজন, জমিদার ও তাদের দোসর ঘুষখোর পুলিস এবার দিশম গুরু শিবু সরেন ও সঙ্গীসাথীদের খুঁজতে শুরু করল| সুদখোর মহাজন, জমিদার ও তাদের দোসর ঘুষখোর পুলিস বুঝতে পেরেছিল যে দিশম গুরু শিবু সরেন ও সঙ্গীসাথীদের গ্রেফতার করতে না পারলে এই “ধান কাটো” আন্দোলনকে দমন করা যাবে না| পুলিস অনেক আন্দোলনকারিকে গুলি করে মেরেছে, অনেককে গ্রেফতারও করেছে কিন্তু দিশম গুরু শিবু সরেনকে ধরতে পারেনি| এইরকম এক সময়ে একদিন গ্রামে মিটিং করে দিশম গুরু শিবু সরেন ও তাঁর প্রিয় বন্ধু ধান সিং মুণ্ডারি পায়ে হেঁটে ফিরছিলেন| তাঁরা বুঝতে পারেননি যে সুদখোর মহাজন ও জমিদারেরা লোকেরা এই খবর আগে থেকেই জানতে পেরে জঙ্গলে পথের ধারে তাদের খুন করার জন্য লুকিয়ে আছে| যেই দিশম গুরু শিবু সরেন ও তাঁর প্রিয় বন্ধু ধান সিং মুণ্ডারি কাছে এসেছেন সুদখোর মহাজন ও জমিদারেরা লোকেরা তাদের উপর লাঠি ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ল| সুদখোর মহাজন ও জমিদারেরা লোকেদের ঝাপিয়ে পড়তে দেখে দিশম গুরু শিবু সরেন ও তাঁর প্রিয় বন্ধু ধান সিং মুণ্ডারি খুব জোরে দৌড় লাগালেন| ধান সিং মুণ্ডারি খুব জোরে দৌড়তে পারতেন| এক ছুটে অনেকদূর যাবার পর খেয়াল করলেন যে প্রিয় বন্ধু শিবু পাশে নেই| ঘটনাস্থলে ফিরে গিয়ে দেখেন যে তার প্রিয় বন্ধু শিবু সরেনকে সুদখোর মহাজন ও জমিদারেরা লোকেরা বেদম মারছে| এই দেখে ধান সিং মুণ্ডারির মাথা এত গরম হলো যে নিজের খুন হবার আশংকা ভুলে গিয়ে দৌড়ে শিবু সরেনের কাছে যাবার চেষ্টা করলেন আর চিৎকার করে বলতে লাগলেন যে “শিবু সরেনের কিছু হলে কাওকেই ছাড়বেন না”| ধান সিং মুণ্ডারির চিৎকার ও দৌড়ে আসতে দেখে সুদখোর মহাজন ও জমিদারেরা লোকেরা ভাবল ধান সিং মুণ্ডারি পাশের গ্রাম থেকে লোক নিয়ে এসেছে| তারা তখন নিজের প্রাণ বাঁচাতে দিশম গুরু শিবু সরেনকে ছেড়ে পালিয়ে গেল| সেই দিন যদি ধান সিং মুণ্ডারি নিজের প্রাণের মায়া ত্যাগ করে শিবু সরেনকে বাঁচাতে দৌড়ে না আসতেন তাহলে সেই দিনেই শিবু সরেন খুন হয়ে যেতেন আর তামাম ঝাড়খণ্ডীদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যেত| আজ হয়তো ইতিহাস অন্যরকম ভাবে লেখা হত|