লিখেছেন – বালকরাম সরেন (Balakram Saren).
ছবি – প্রতিকী (ইন্টারনেট থেকে সংগ্রীহিত)|
সংবিধানে উল্লেখ করা আছে সংরক্ষণ হল প্রতিনিধিত্বের অধিকার। সমস্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানে এবং নির্বাচনে ST দের একটা প্রতিনিধিত্ব নেওয়ার সুযোগ ।
নির্বাচনের ক্ষেত্রে St Community থেকে প্রতিনিধিত্বের অধিকার দেওয়া হয়। চাকরির ক্ষেত্রে মূলত আর্থিক ভাবে জেনারেল দের সাথে সমতা আনার লক্ষ্যেই সংরক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
এখন দেখার বিষয়, স্বাধীনতার এত বছর পরও আমরা কতটা জেনারেল দের কাছাকাছি আর্থিক ভাবে উন্নীত হলাম ।
এই সম্পর্কে তুলনামূলক কোনো পরিসংখ্যান আছে কি নেই, আমার জানা নেই তবে আদিবাসী তথা ভূমিপুত্ররা যে এখনও যথেষ্ট পিছিয়ে রয়েছে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
তাহলে এতদিন ধরে সংরক্ষণ থাকা সত্ত্বেও আদিবাসীরা পিছিয়ে আছে কেন?
এর কারন খুঁজতে গিয়ে নানান রকম সমস্যার কথা উঠে আসছে।
আমার মনে হয়েছে , সংরক্ষণ থাকা সত্ত্বেও সব জায়গায় নিয়ম মাফিক নিয়োগ করা হচ্ছে না । কখনও ইচ্ছাকৃত ভাবে, আবার কখনও suitable candidate not found বলে vacancies de-reserve করা হচ্ছে অথবা vacancy থেকেই যাচ্ছে । RTI করে তথ্য জেনে নিতে পারেন কোথায় ক’টা reserv post vacant পড়ে আছে ।। এখান থেকে পরিষ্কার বুঝতে পারবেন নিয়োগের ক্ষেত্রে কত সংরক্ষণ আইন লঙ্ঘন করা হচ্ছে। সেই জন্য সরকার, এই বেনিয়ম আটকাবার জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম আইন প্রণয়ন করতে বাধ্য হয়েছে। তাতেও বেনিয়ম কিন্তু আটকানো যায়নি। কারন আইন থাকা সত্ত্বেও আদিবাসীদের পক্ষে কেসে লড়ার মত সাহস বুদ্ধি টাকা কিছুই নেই।
এই সব তদারকি বা নজর রাখার জন্য সরকার sc st commission দপ্তর খুলে রেখেছে , কিন্তু এই দপ্তরও পার্টি দ্বারাই সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত। অভিযোগ জানালেও কোনো action নেওয়া হয় না। সবই রাজনীতির খেল। এই সব দূর্নীতি কোনো মিডিয়া ভূল করেও ফোকাস করেনা।
এদিকে আদিবাসীদের শিক্ষিত অংশ যারা চাকরি করে, যারা সংরক্ষণ সম্পর্কে একটু আধটু বুঝে, তারা নিজের সংসার ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত।
আদিবাসী রাজনেতা এই সবের বিরুদ্ধে উচ্চারণ করেনা, কারন পার্টির বিরুদ্ধোচারন হয়ে যাবে। তার ভবিষ্যৎ পরিণতি ভালো হবেনা।
এছাড়াও St সংরক্ষণের উপর দূর্নীতি করার আর এক নতুন সংস্করণ যা বর্তমানে এক বার্নিং ইস্যু “ভূয়ো ST Community”.
এরই মধ্যে এই ‘ভূয়ো আদিবাসী’ সম্প্রদায় এর কাছে হাজার হাজার ST certificate চলে গেছে। ফলে ST দের জন্য সংরক্ষিত আসনে এই ভূয়ো ST রাই সিংহ ভাগ দখল করছে।
এছাড়াও আদিবাসী সম্প্রদায়গুলির (St) নিজেদেরও গাফিলতি আছে। সমাজ থেকে এখনও মাদক দ্রব্য সেবন বর্জন বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি । আর্থসামাজিক উন্নয়নে “নেশা”একটি বড় অন্তরায়।
এই সব কারনের জন্যই ST দের সেই ভাবে উন্নয়ন হয়নি। এটা আমার অভিমত।
আসলে সংরক্ষণ বিষয় টা স্বাধীনতার গোড়া থেকেই জেনারেলরা কেউ সমর্থন করেনি। ইংরেজরা সংরক্ষণ ব্যবস্থা সমর্থন করেছিল বলে B R Ambedkar এই ব্যবস্থা সাংবিধানিক ভাবে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিলেন । কিন্তু তথাকথিত উচ্চ জাতিরা সংরক্ষণ ব্যবস্থা মোটেও ভালো ভাবে মেনে নেয় নি। তার জন্য বাবা সাহেব এবং মারাং গমকে জয়পাল সিংকে প্রচুর তর্কবিতর্ক করতে হয়েছিল। অর্থাৎ গান্ধী নেহরু জিন্নাহ পেটেল এক রকম নিরুপায় হয়েই এই সংরক্ষণ পদ্ধতি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন । উচ্চ জাতি কখনও মন থেকে মেনে নেয়নি, এখনও না। বরং বর্তমান জেনারেল প্রজন্মের কাছে সংরক্ষণ ইস্যুটা ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংরক্ষণ ক্ষতম করার জন্য সরকারের কাছে অহরহ চাপ সৃষ্টি করছে, প্রকাশ্যে সংবিধান পোড়াচ্ছ, বাবা সাহেবের মূর্তি বা ছবি তে পেচ্ছাপ পায়খানা করছে এবং দূ:খের বিষয় তথা কথিত এই উচ্চ জাতির সরকার, এই ধরনের কার্যকলাপকে পূর্ণ সমর্থন করছে বলেই তাদের বিরুদ্ধে কোনো রকম action নেইনি। এই সমস্ত কার্যকলাপ থেকে অনুমান করুন “সংরক্ষণ ভোগী” রা বঞ্চিত হলে সরকারের কাছ থেকে কতটা সহায়তা পাবেন। স্বাভাবিক ভাবেই যতই আইন তৈরি করুক, যতই কমিশন গঠন করুক তার সুফল ST দের কপালে আসেনি। এই সব শক্তিশালী দূর্নীতির বিরুদ্ধে আইনি লড়াই এর জন্য St Community র কাছে বুদ্ধিও নেই শক্তিও নেই, সাহসও নেই আর অর্থও নেই । ফলে সংরক্ষণ সংক্রান্ত দূর্নীতি ক্রমে বেড়েই চলেছে। দূর্নীতিবাজ দের কোনো ভয় নেই, কারন ভয় পাওয়ার মত কোনো উদাহরন আমরা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়নি।
অথচ তথাকথিত এই উচ্চ জাতি ধূর্তবাজরা ভূলে গেছে এই ভারতবর্ষের জমি আদিবাসীদের হাতে তৈরী। ছল চাতুরি করে, সুলতান সম্রাট বড়লাট দের তেল মেরে আদিবাসীদের সমস্ত জমি কেড়ে নিয়েছে। আমার এই কথা আপনি অবজ্ঞা করতে পারেন তাচ্ছিল্য করতে পারেন, কিন্তু এটাই বাস্তব। আদিবাসীরা এতদিন তাদের কথা বলেনি, তাদের অধিকার জানায়নি বলে বর্তমান প্রজন্মের কাছে এই গুলো অজানা রয়ে গেছে , ইতিহাসে লেখা হয়নি, এটা ভূয়ো ইতিহাস, আমাদের ভূয়ো ইতিহাস পড়ানো হচ্ছে, আদিবাসীদের সত্যিকারের কথা লেখা হয়নি, এই ইতিহাস আমরা মানি না, এই ইতিহাস পুড়িয়ে দাও। ঐতিহাসিক রা ধূর্তবাজদের কাছে “সুপারি” খেয়ে ইতিহাস রচনা করেছেন, সত্য ঘটনা লেখা হয়নি , বর্তমান সাংবাদিকদের কাছেও একই উদাহরণ দেখতে পাই, সাময়িক হলেও টাকা দিয়ে ‘সত্য’ ঢাকা দেওয়া যায়, সেই সত্য সেদিনও ঢাকা দিয়েছিল , আদিবাসীদের জমি কেড়ে নেওয়া হচ্ছিল বলেই তো সিধু কানুরা হুল করেছিল, ফলে CNT, SPT র মত আইন আদায় করতে পেরেছিল। জমির মালিকদের বংশধর আজও বেঁচে আছি, আমাদের জমির ভাগ দিতে হবে। আদিবাসী বন্ধু, আওয়াজ তুলুন, আমাদের জমির ভাগ দিতে হবে।
মিটিং মিছিলে আওয়াজ তুলুন আমাদের জমি ফেরত দিতে হবে।
Reservation?????
এ কি reservation!!!
কয়েক শ বছরের যন্ত্রণায় সামান্য মলম?????
বর্গা পাট্টা!!!!!!!!!!
দীর্ঘ বঞ্চনার বিনিময়ে এ কি আমাদের ভিক্ষা?????
জল জংগল জমির অধিকার তুমি দেওয়ার কে?????
চালাকি!!!!!??!!!!!!! ধূর্তবাজ!!!
5th 6th scheduled এর ললিপপ!!!!!
এখন আমরা বুঝতে পারছি, আদিবাসীদের জন্য এই সব পরিকল্পনা পিছনে উদ্দেশ্য নিতান্তই কর্তব্যের সামান্য অংশ মাত্র, তাও আবার আন্দোলনের বিনিময়ে।
কিন্তু বড় দূ:খের বিষয়, আদিবাসীদের মধ্যে একতা নেই। আমাদের শোষণ ব্রিটিশ পিরিয়ডের মতই চলছে, কেবল শোষণের পদ্ধতি টা পরিবর্তন হয়েছে মাত্র।
আরো আশ্চর্য লাগে কিছু আদিবাসী মানুষ প্রকাশ্যে ST হিসাবে থাকতে চায়না, নিজের পরিচয় গোপন রেখে Reservation facilities enjoy করতে চায় । তাই তারা “সাব-কাস্ট” টি জিইয়ে রেখে পদবী পরিবর্তন করেছে, পরিবর্তন করেছে সমাজ সংস্কৃতি ভাষা কৃষ্টি ধর্ম, পরিবর্তন করেছে তার সমস্ত পরিচয়, ছিন্ন করেছে স্বজাতির সঙ্গে সব সম্পর্ক। এই culprit দের জন্যই ST দের সংরক্ষণ আজ non-ST দের দিকে প্রবল গতিতে drainage হচ্ছে, যে রকম সিদু-কানুর পিরিয়ডে জমি, অ-আদিবাসীর দিকে drainage হয়েছিল।
সেদিন CNT, SPTA দিয়ে জমি হস্তান্তর রোধ করা গিয়েছিল, আজ SC ST IDENTIFICATION ACT 1994 দিয়ে সংরক্ষণ হস্তান্তর রোধ করবই।
চারিদিকে সিধু কানু বিরষা মুন্ডার বংশধর আজ তাদের হক অধিকার থেকে বঞ্চিত।. তারা প্রতি পদে পদে নানান ভাবে অত্যাচারিত। তারা “হুল” করার জন্য প্রস্তুত নিচ্ছে, আজ হোক কাল হোক, হুল তো হবেই। সেদিন এই দাবীও থাকবে —”যারা আদিবাসী হিসাবে পরিচয় দিতে লজ্জা পায়,
তাদের সংরক্ষণ অধিকার থেকে বের করে দেওয়া হোক”।
কারন সংরক্ষণ কেবলমাত্র আর্থসামাজিক উন্নতির জন্য নয়, আদিবাসী স্বাতন্ত্রতা বজায় রাখার দায়িত্বও বর্তায়।
জহার,
বালকরাম সরেন ।